চট্টগ্রামের ফিনলে স্কয়ারে দুই মেয়েকে নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক দেলোয়ার সাইদ। স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া দুই মেয়ের পছন্দ সম্পর্কে বাবা বলেন, বড় মেয়ে কিনেছে ভারতীয় সারারা আর ছোটজনের পছন্দ হয়েছে পাকিস্তানি গাউন।
চট্টগ্রামের বাজারগুলোতে এবারের ঈদে মেয়েদের পোশাকের মধ্যে এই দুই ধরনের পোশাকই রয়েছে পছন্দের শীর্ষে। কিশোরী-তরুণীদের মন কেড়ে নিয়েছে এসব পোশাক।
বৃহস্পতিবার নগরীর ফিনলে স্কয়ার, রিয়াজুদ্দিন বাজার, আফমি প্লাজাসহ বেশ কয়েকটি মার্কেট ঘুরে দেখে যায় মেয়েদের পছন্দের এই প্রবণতা।
তবে অন্য বছরের মতো এবার বাজার তেমন জমজমাট না। করোনা আর লকডাউনের ধাক্কা লেগেছে বাজারে। যদিও বৃহস্পতিবার থেকে গণপরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় লোক সমাগম কিছুটা বেড়েছে।
একই সঙ্গে বেড়েছে বিক্রি। বেশি বিক্রি হচ্ছে মেয়েদের পোশাক। সারারা ও গাউন ছাড়াও ঘারারা, বার্বি গাউন, প্যাবলন, লেহেঙ্গাসহ রেডিমেড পোশাক প্রচুর বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ী ইকবাল হায়দার বলছেন, এবার সবচেয়ে জনপ্রিয় পোশাকের মধ্যে আছে পাকিস্তানি, ইরানি ও ভারতীয় গাউন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, বেচাবিক্রি তো ঠান্ডাই, তবে এখন পর্যন্ত যা বিক্রি করেছি তার মধ্যে ইরানি ও পাকিস্তানি গাউন বেশি বিক্রি হয়েছে। তা ছাড়া ভারতীয় গাউনেও আগ্রহ আছে মেয়েদের।
একমাত্র কলেজপড়ুয়া মেয়েকে ঈদের নতুন জামা কিনে দিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নগরীর আফমি প্লাজায় এসেছেন মোহসেনা মানহা। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মেয়ের পছন্দমতো ইরানি সারারা ড্রেস কিনে দিয়েছি। ও যেহেতু পছন্দ করে নিয়েছে তাতে আমার আপত্তি নেই।’
পছন্দের পোশাক সারারা। ছবি: নিউজবাংলা
ফিনলে স্কয়ারে গিয়ে দেখা গেল ঈদের নতুন জামা কিনতে এসে রেডিমেড পোশাক প্যাবলন কিনেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরিন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, আমার ফ্রেন্ডদের অনেকে সারারা ও ঘারারা নিয়েছে। এগুলো নতুন পোশাক বলা হলেও এগুলো আসলে পুরোনো। তবে এখন নতুন করে জনপ্রিয় হয়েছে। সারারা আমার ভালো লাগেনি বলে নিইনি, আমি প্যাবলন নিয়েছি।
ব্যবসায়ীরা জানান, লকডাউনের কারণে এবারও মন্দা চলছে ঈদ বাজারে। নগরীর ফিনলে স্কয়ারের কাপড় ব্যবসায়ী লোকমান হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, গত বছর করোনার কারণে আমাদের অনেক লোকসান হয়েছে। তাই একবারের ঈদে সেটা পুষিয়ে নেয়ার চিন্তা ছিল আমাদের। কিন্তু আবারও করোনা বেড়ে যাওয়ায় লকডাউনের কারণে লোকসানের আশঙ্কা করছি আমরা। ক্রেতা তো খুব একটা নাই, যা আছে তাদের মধ্যে মেয়েদের পছন্দের তালিকায় এবার রয়েছে রেডিমেড পোশাক। এর মধ্যে রয়েছে সারারা, ঘারারা, লেহেঙ্গা ইত্যাদি।
এ সময় মার্কেট খোলা রাখার শর্ত হিসেবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে বলা হলেও তা মানতে দেখা যায়নি অনেক দোকানিকে। তবে প্রায় সব মার্কেটের প্রবেশ পথে থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরা ব্যবহার করে ক্রেতাদের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে তবেই প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ খুরশীদ আলম বলেন, চট্টগ্রাম মহানগর এবং জেলার সব উপজেলায় প্রায় ৩ লাখ দোকান রয়েছে। এর মধ্যে পোশাকের দোকান আছে প্রায় ৬০ হাজার।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, চট্টগ্রাম শহরে প্রতি বছর ঈদ বাজারে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়।
চট্টগ্রাম সম্মিলিত হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি মো. মিরন হোসেন মিলন বলেন, 'চট্টগ্রাম নগরীতে ২২ হাজার ভ্রাম্যমাণ দোকান (হকার) রয়েছে। এর মধ্যে ১৫ হাজার হকার পোশাক, জুতা, কসমেটিকস পণ্য বিক্রি করে।
চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির তথ্যমতে, চট্টগ্রামে ২ হাজার ৫০০ ফ্যাশন ও বুটিক হাউস রয়েছে।